তানভীর™ 2,363 Report post Posted September 20, 2012 কলেজে থাকিতে রবীন্দ্রনাথের হৈমন্তী গল্পটি পড়েনাই এরকম মানুষ বোধহয় খুব কমই রইয়াছে। তখন তো আর আজকালকার মত অহরহ ফরেক্স ট্রেড হইত না। তাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও ফরেক্স লইয়া গল্প-কবিতা লিখবার সুযোগ পান নাই। পাহিলে বোধকরি এরকম কিছুই লেখিবার প্রয়াস করিতেন। কন্যার বাপ সবুর করিতে পারিতেন, কিন্তু বরের বাপ সবুর করিতে চাহিলেন না। তিনি দেখিলেন, মেয়েটি যেইভাবে তাহার প্রফিটের স্ক্রিনশট ফেসবুকে গ্রুপে গ্রুপে পোস্ট করিতেছে, তাতে কিছুদিনের মধ্যেই তাহার পেছনে অনেক ফরেক্স ট্রেডারের লাইন পরিয়া যাবে, সেইজন্যই তাড়া।আমি ছিলাম বর, সুতরাং বিবাহসম্বন্ধে আমার মত যাচাই করা আবশ্যক ছিল। কিন্তু ৫০০ এবং ১০০০ ডলারের দুইখানা অ্যাকাউন্ট শুন্য করিয়া ফেলিবার পর, আমার পিতা আর আমাকে ফরেক্স ট্রেডার বলিয়া গণ্য করিতে সম্মত ছিলেন না। আমিও ফরেক্স ট্রেডার স্ত্রী পাইবার খুশিতে ঘনঘন বিচলিত হইয়া উঠিলাম।আমাদের দেশে যে মানুষ একবার বিবাহ করিয়াছে বিবাহ সম্বন্ধে তাহার মনে আর কোনো উদ্বেগ থাকে না। সত্য বলিতেছি, আমার মনে এমন বিষম উদ্বেগ জন্মে নাই । বরঞ্চ বিবাহের কথায় আমার মনের মধ্যে যেন কোথায় যেন সাপোর্ট এর রেসিসট্যান্স ভাঙ্গিয়া বারবার ব্রেকআউট হইতে লাগিল।কিন্তু, এ কী করিতেছি। এ কি একটি গল্প যে আমি ফরেক্স জার্নাল লিখিতে বসিলাম? এমন সুরে আমার লেখা শুরু হইবে এ আমি কি জানিতাম?আমার সঙ্গে যাহার বিবাহ হইয়াছিল তাহার সত্য নামটা দিব না। কারণ, পৃথিবীর ইতিহাসে তাহার নামটি লইয়া এক্সপার্ট ট্রেডারদের মধ্যে বিবাদের কোনো আশঙ্কা নাই। যে তাম্রশাসনে তাহার নাম খোদাই করা আছে সেটা আমার হৃদয়পট । কোনোকালে সে পট এবং সে নাম বিলুপ্ত হইবে , এমন কথা আমি মনেও আনিতে পারি না। তাহার নামে আমি একখানা ট্রেডিং স্ট্রাটেজি বানাইয়াছি। কিন্তু, যে অমৃতলোকে তাহা অক্ষয় হইয়া রহিল সেখানে অন্য কোন ফরেক্স ট্রেডারের আনাগনা নাই।আমার এ লেখায় তাহার যেমন হউক একটা নাম চাই। আচ্ছা, তাহার নাম দিলাম ইচিমোকু। কেননা, ইচিমোকু কিনকো হ্যায়ো, শুনলেই মনের ভেতর কেমন জানি একটা দোলা সৃষ্টি হয়। আর আমার হৃদয়ের রাজকন্যা তো স্বল্পস্থায়ী নয় যে তাহাকে চাইনিজ নাম দিব। তাই জাপানিজ ইচিমোকু কিনকো হ্যায়োর সাথে মিল রাখিয়া তাহার নাম রাখিলাম ইচিমোকু। মেটাট্রেডারে চার্ট ওপেন করিয়া ক্যানডেল দেখিলেই ইচিমোকুর সাথে ক্যানডেল-লাইট ডিনার করিবার স্বপ্নে বিভোর হইতাম।ইচিমোকু নামটা শুনিয়াই ফেসবুকে কিংবা বিডিপিপসে সার্চ দিলে কাজ হইবেনা, কারন আমি আগেই বলিয়াছি ইহা আমার দেয়া কাল্পনিক নাম। কাকতালীয় ভাবে অতীতে, বাস্তবে বা ভবিষ্যতে যদি কোনভাবে কাহারো সাথে ইহা মিলিয়া যায়, তবে আমি কিন্তু দায়ী থাকিব না, বলিয়া রাখিলাম।ইচিমোকু ছিল আমার থেকে ২ বছরের ছোট। আমার পিতা যে ফরেক্স ট্রেডার মেয়ের সাথে আমার বিবাহ দিবেন বলে ঠিক করিয়া রাখিয়াছিলেন তাহা কিন্তু নহে। এসব অনলাইনে কাজকর্মে তাহার মোটেও আস্থা ছিল না। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে পিতা একখানা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলিয়াছিলেন। কে বা কাহার তাকে একটি ফরেক্স গ্রুপে ইনভাইট করিয়াছিল তা আমার জানা নাই, কিন্তু সেইখানে দিনের পর দিন ইচিমোকুর লাভের নানা স্ক্রিনশট দেখিয়া আমার পিতা মুগ্ধ হয়ে গেলেন। তাহার বিশ্বাস ছিল বালিকা নিশ্চয়ই তাহার ভাবী জামাইয়ের জন্য সকল টাকা-পয়সা-ডলার জমাইতেছে। মাঝে মাঝে তাকে "হোলি গ্রেইল" নামক বস্তু ৫০-১০০ ডলারে বিক্রয়ের বিজ্ঞাপন দিতে দেখিতেন। তিনি বুঝলেন বালিকা অনেক প্রতিভাবান ও বটে। আমাকে তিনি অনেকবার মোমবাতি দিয়া "হোলি গ্রেইল" খুঁজিতে দেখিয়াছিলেন। তাহার পুত্র মহাশয়ের কাছে যাহা নাই, তাহা এই বালিকার কাছে আছে জানতে পারিয়া তিনি তৎক্ষনাক আমার শ্বশুরকে প্রস্তাব পাঠাইলেন।আমার শ্বশুরের বিশেষ কোনো-একটা মতের বালাই ছিল না। তিনি কোন এক সরকারি চাকুরি করিতেন। ছোটবেলায় তিনি ইচিমোকুকে একখানা ম্যাজিক বাক্স অর্থাৎ কম্পিউটার কিনিয়া দিয়াছিলেন। সেই থেকেই ইচিমোকুর ইন্টারনেটের প্রতি ব্যাপক আগ্রহ। মাঝে মাঝে কি সাদা-কাল চার্টে কি কি জানি করিতে দেখিতেন। কন্যার বিবাহের প্রস্তাবে তিনি তাই সহজের সম্মত হইয়া গেলেন।বিবাহসভায় চারি দিকে হট্টগোল; তাহারই মাঝখানে কন্যার কোমল হাতখানি আমার হাতের উপর পড়িল। এমন আশ্চর্য আর কী আছে। আমার মন বারবার করিয়া বলিতে লাগিল, 'আমি পাইলাম, আমি ইহাকে পাইলাম। এ যে দুর্লভ, এ যে মানবী, এ যে হোলি গ্রেইল।'কর্মক্ষেত্রে ফিরিবার পূর্বে আমার শ্বশুর আমাকে ডাকিয়া বলিলেন, "বাবা, আমার মেয়েটিকে আমি সতেরো বছর ধরিয়া জানি, আর তোমাকে এই ক'টি দিন মাত্র জানিলাম, তবু তোমার হাতেই ও রহিল। যে ধন দিলাম, তাহার মূল্য যেন বুঝিতে পার, ইহার বেশি আশীর্বাদ আর নাই।"তাঁহার বেহাই বেহান সকলেই তাঁহাকে বার বার করিয়া আশ্বাস দিয়া বলিলেন, “বেহাই , মনে কোনো চিন্তা রাখিয়ো না। তোমার মেয়েটি যেমন বাপকে ছাড়িয়া আসিয়াছে এখানে তেমনি বাপ মা উভয়কেই পাইল।”সব-শেষে আমাকে নিভৃতে লইয়া গিয়া অপরাধীর মতো সসংকোচে বলিলেন, "আমার মেয়েটির ফরেক্স ট্রেডিং করিবার বড়ই শখ, ট্রেড করিতে সে অনেক ভালোবাসে। রাত-বিরাতে উঠিয়া সিডনী সেশনে বাজার পর্যবেক্ষণ করে। সে যদি মাঝে মাঝে ট্রেড করিয়া প্রফিট করে তাতে তোমার বাবা জানিতে পারিলে কি রাগ করিবেন।" প্রশ্ন শুনিয়া কিছু আশ্চর্য হইলাম । সংসারে কোনো-একটা দিক হইতে অর্থসমাগম হইলে বাবা রাগ করিবেন , তাঁহার মেজাজ এত খারাপ তো দেখি নাই।যেন ঘুষ দিতেছেন, এমনিভাবে আমার হাতে একখানা কাগজ ধরাইয়া দিলেন। দেখিলাম তাহাতে একখানা স্বনামধন্য রেগুলেটেড ব্রোকারের অ্যাকাউন্ট নাম্বার আর পাসওয়ার্ড। তারপর তিনি কহিলেন, ইহাতে ১০০০ ডলার ডিপোজিট করিয়া দিয়াছি। শুনেছি তোমারও ফরেক্স ট্রেডিংয়ের অনেক শখ। মানিবুকারস দিয়া ডিপোজিট করিয়াছি। চাইলে ব্যাংকেও টাকা তুলিয়া আনিতে পারিবে। এই বলিয়াই আমার শ্বশুর দ্রুত প্রস্থান করিলেন। আমার সালাম লইবার জন্যও সবুর করিলেন না। আমি স্তব্ধ হইয়া বসিয়া ভাবিতে লাগিলাম। মনে বুঝিলাম, ইহারা অন্য জাতের মানুষ।বন্ধুদের অনেককেই তো বিবাহ করিতে দেখিলাম। তাহাদের সকলের স্ত্রীকেই কখনই সংসারের জন্য অর্থ উপার্জন নিয়ে ভাবতে দেখিনি। তাহাদের মনের মধ্যে একই রকম ভাললাগা সৃষ্টি হয়না, যেমন ভাললাগা আমার আর ইচিমোকুর রয়েছে ফরেক্সের প্রতি। আমার সন্দেহ হয়, অধিকাংশ লোকে স্ত্রীকে বিবাহমাত্র করে, পায় না, এবং জানেও না যে পায় নাই; তাহাদের স্ত্রীর কাছেও আমৃত্যুকাল এ খবর ধরা পড়ে না। কিন্তু ভাগ্যগুণে আমি ইচিমোকুকে পাইয়াছি। সে যে শুধু ইন্ডিকেটর, রোবট, টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ কিংবা ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণই জানে তাই নহে, প্রাইস অ্যাকশান সম্পর্কেও তাহার বিস্তর জ্ঞান। সে আমার সম্পত্তি নয়, সে আমার সম্পদ ।ইচিমোকু - না , এ নামটা আর ব্যবহার করা চলিল না। একে তো এটা তাহার নাম নয় , তাহাতে এটা তাহার পরিচয়ও নহে। আর ইচিমোকু এমন কোন ইন্ডিকেটরও নয় যাহা ট্রেড করার জন্য অতি উত্তম কোন পন্থা। কী হইবে গোপনে রাখিয়া। তাহার আসল নাম হৈমন্তী।আমার মনে একটা ভাবনা ছিল যে, প্রাইস অ্যাকশান জানা মেয়ে, কী জানি কেমন করিয়া তাহার মন পাইতে হইবে। কিন্তু, অতি অল্পদিনেই দেখিলাম, মনের রাস্তার সঙ্গে ট্রেডিং অ্যানালাইসিসের রাস্তার কোনো জায়গায় কোনো কাটাকাটি নাই।এ তো গেল এক দিকের কথা। আবার অন্য দিকও আছে, সেটা বিস্তারিত বলিবার সময় আসিয়াছে।ফরেক্স ওয়ার্ল্ডে হৈম ছিল ব্যাপক জনপ্রিয়। তাহার প্রফিটের স্ক্রিনশট দেখে সবাই ছিল মুগ্ধ। ফরেক্স করিয়া যে তাঁহার কত টাকা জমিল সে সম্বন্ধে জনশ্রুতি নানাপ্রকার অঙ্কপাত করিয়াছে , কিন্তু কোনো অঙ্কটাই লাখ ডলারের নীচে নামে নাই । ইহার ফল হইয়াছিল এই যে, আমাদের সংসারে হৈমর দর যেমন-যেমন বাড়িল, হৈমর আদরও তেমনি বাড়িতে থাকিল । আমাদের ঘরের কাজকর্ম রীতিপদ্ধতি শিখিয়া লইবার জন্য সে ব্যগ্র, কিন্তু মা তাহাকে অত্যন্ত স্নেহে কিছুতেই হাত দিতে দিলেন না। এমন-কি , হৈমর সঙ্গে যে দাসী আসিয়াছিল যদিও তাহাকে নিজেদের ঘরে ঢুকিতে দিতেন না তবু তাহাকে প্রশ্নমাত্র করিলেন না, পাছে সেও কিছু কিছু অ্যানালাইসিস করিতে জানে কিনা, কি না কি একটা উত্তর শুনিতে হয়।এমনিভাবেই দিন চলিয়া যাইতে পরিত, কিন্তু হঠাৎ একদিন ফরেক্স শান্তি কমিটির (ফরেক্স পিচ আর্মি) ওয়েবসাইটে হৈমন্তীর নামে লাল বাত্তি জ্বলিলো। ফরেক্স শান্তি কমিটি তাহাকে ভুয়া ইন্ডিকেটর আর রোবটকে পরিবর্তন করিয়া 'হোলী গ্রেইল' নামে বিক্রয় করবার দরুন তাহাকে স্ক্যামার বলিয়া ঘোষণা করিল।যদিও হৈমর ফরেক্স ট্রেড করিয়া জমানো সম্পত্তির পরিমাণ সম্বন্ধে আমার বাবার সঙ্গে তাঁহার কোনোদিন কোনো আলোচনাই হয় নাই, তবু যখন জানিতে পারিলেন ওইগুলা ডেমো অ্যাকাউন্টের স্ক্রীনশট, বাবা জানি না কোন্ যুক্তিতে ঠিক করিলেন, তাঁহাকে ইচ্ছাপূর্বক প্রবঞ্চনা করা হইয়াছে।বাবার একটা ধারণা ছিল, হৈমন্তী বড়-সড় ট্রেডার ধরনের কিছু। তাহার ধারনা ছিল ফেসবুকে পোস্ট করা সব স্ক্রিনশট রিয়েল অ্যাকাউন্টের। তিনি কখনও হৈমর ভেরিফাইড মাই.এফ.এক্সবুক প্রোফাইল চেক করিয়া দেখিবার প্রয়োজন অনুভব করেন নাই। ইতিমধ্যে হৈম তার একখানা পাম অ্যাকাউন্ট শুন্য করিয়া ফালাইয়াছে। সেই নিয়াও বিনিয়োগকারীদের সাথে তাহার খানিকটা বিবাদ হইয়াছে। অবস্থা বেগতিক দেখে ফেসবুকে তার 'এঞ্জেল হৈমন্তী' অ্যাকাউন্টটি ডিঅ্যাক্টিভ করিতে হইয়াছে।হৈমর দুর্গতিতে দুঃখ করিব কী, তাহার কাছে আমার মাথা হেঁট হইয়া গেল। সেদিন দেখিলাম, শরৎপ্রভাতের আকাশের মতো তাহার চোখের সেই সরল উদার দৃষ্টি একটা কী সংশয়ে ম্লান হইয়া গেছে । ভীত হরিণীর মতো সে আমার মুখের দিকে চাহিল। ভাবিল, ‘ইহারা কি জানিতেন না যে ফেসবুকে গ্রুপে যাহা পোস্ট হয়, তাহা সত্য নয়?'হৈম মানি ম্যানেজমেন্টে খানিকটা দুর্বল ছিল। সেদিন একখানা শৌখিন-বাঁধাই-করা মানি ম্যানেজমেন্টের বই তাহার জন্য কিনিয়া আনিয়াছিলাম। বইখানি সে হাতে করিয়া লইল এবং আস্তে আস্তে কোলের উপর রাখিয়া দিল, একবার খুলিয়া দেখিল না। আমি তাহার হাতখানি তুলিয়া ধরিয়া বলিলাম, “ হৈম, আমার উপর রাগ করিয়ো না। আমি তোমার মনে কখনো আঘাত করিব না।” হৈম কিছু না বলিয়া একটুখানি হাসিল। সে হাসি বিধাতা যাহাকে দিয়াছেন তাহার কোনো কথা বলিবার দরকার নাই।অন্তঃপুরে হৈমর একটি প্রকৃত ভক্ত ছিল, সে আমার ছোটো বোন পিপসখিনা। বউদিদিকে ভালোবাসে বলিয়া তাহাকে অনেক গঞ্জনা সহিতে হইয়াছিল। সংসারযাত্রায় হৈমর সমস্ত অপমানের পালা আমি তাহার কাছেই শুনিতে পাইতাম। এক দিনের জন্যও আমি হৈমর কাছে শুনি নাই। এ-সব কথা সংকোচে সে মুখে আনিতে পারিত না। সে সংকোচ নিজের জন্য নহে।বাবা আমার উপর নির্দেশ জারি করিয়াছেন যে হৈমকে ত্যাগ করিতে হইবে। তিনি আর পূর্বের মত ভুল করিবেন না। কোন ফোরাম ঘাঁটিয়া তিনি নাকি আমার লাগিয়া মাই.এফ.এক্সবুক ভেরিফাইড পাত্রী পাইয়াছেন। হৈমকে হারাইবার চিন্তায় আমি ব্যাকুল হইলাম। আবার বিবাহ করিলে হয়তো ভালো ট্রেডার স্ত্রী পাইবো, সে হয়ত কোন জাদুর রোবট কিংবা হোলী গ্রেইল দিয়া প্রফিট করিয়া আমার পিতাকে সন্তুষ্ট করিতে পারিবে। কিন্তু সে কি আর হৈমর মত হইবে? সে কি প্রাইস অ্যাকশান জানিবে? চার্টের গঠন কিংবা মোমবাতি দেখিয়া কি সে ট্রেড করিতে পারিবে?না আমি হৈমকে হারাইতে দিব না। তাহার মনে আমি কষ্ট দিতে পারিব না। হৈমকে কিভাবে মানি ম্যানেজমেন্ট শেখানো যায় তাহা লইয়া কোমর বাঁধিয়া লাগিলাম। একদিন রবিবার মধ্যাহ্নে বাহিরের ঘরে বসিয়া মানি ম্যানেজমেন্টতত্ত্ব বইখানার বিশেষ বিশেষ লাইনের মধ্যপথগুলা ফাড়িয়া ফেলিয়া নীল পেন্সিলের লাঙল চালাইতেছিলাম, এমন সময় বাহিরের দিকে হঠাৎ আমার চোখ পড়িল।আমার ঘরের সমুখে আঙিনার উত্তর দিকে অন্তঃপুরে উঠিবার একটা সিঁড়ি। তাহারই গায়ে গায়ে মাঝে মাঝে গরাদে-দেওয়া এক-একটা জানলা। দেখি, তাহারই একটি জানলায় হৈম চুপ করিয়া বসিয়া পশ্চিমের দিকে চাহিয়া। সে দিকে মল্লিকদের বাগানে কাঞ্চনগাছ গোলাপি ফুলে আচ্ছন্ন। আমার বুকে ধক্ করিয়া একটা ধাক্কা দিল; মনের মধ্যে একটা অনবধানতার আবরণ ছিঁড়িয়া পড়িয়া গেল। এই নিঃশব্দ গভীর বেদনার রূপটি আমি এতদিন এমন স্পষ্ট করিয়া দেখি নাই। বুঝিলাম তার মনের মধ্যে অনবরত স্পাইক চলিতেছে।কিছু না , আমি কেবল তাহার বসিবার ভঙ্গিটুকু দেখিতে পাইতেছিলাম। কোলের উপরে একটি হাতের উপর আর-একটি হাত স্থির পড়িয়া আছে , মাথাটি দেয়ালের উপরে হেলানো , খোলা চুল বাম কাঁধের উপর দিয়া বুকের উপর ঝুলিয়া পড়িয়াছে । আমার বুকের ভিতরটা হুহু করিয়া উঠিল আর কষ্টের আপট্রেন্ড শুরু হইয়া গেল।আমার নিজের জীবনটা এমনি কানায় কানায় ভরিয়াছে যে , আমি কোথাও কোনো শূন্যতা লক্ষ করিতে পারি নাই। আজ হঠাৎ আমার অত্যন্ত নিকটে অতি বৃহৎ একটা নৈরাশ্যের গহ্বর দেখিতে পাইলাম। কেমন করিয়া কী দিয়া আমি তাহা পূরণ করিব।হৈম যে অন্তরে অন্তরে মুহূর্তে মুহূর্তে মরিতেছিল। তাহাকে আমি সব দিতে পারি কিন্তু মুক্তি দিতে পারি না - তাহা আমার নিজের মধ্যে কোথায়? সেইজন্যই ঐ গরাদের ফাঁক দিয়া নির্বাক্ আকাশের সঙ্গে তাহার নির্বাক্ মনের কথা হয়; এবং এক-একদিন রাত্রে হঠাৎ জাগিয়া উঠিয়া দেখি সে বিছানায় নাই, হাতের উপর মাথা রাখিয়া আকাশ-ভরা তারার দিকে মুখ তুলিয়া ছাতে শুইয়া আছে। আমি তাহাকে বলিলাম হৈম তোমাকে মানি ম্যানেজমেন্ট শিখিতে হইবে। তুমিও ট্রেড করিয়া প্রফিট করিবে। পিতাকে তোমার ভেরিফাইড মাই.এফ.এক্সবুক প্রোফাইল দেখাইয়া আমি প্রমান করিয়া দিব আমার হৈম ফেলনা নহে। হৈম কহিল আমাকে দিয়া মানি ম্যানেজমেন্ট চলিবে না। উহা বড় কঠিন কাজ, আমার মাথায় খেলে না। আমিতো ট্রেডিংয়ের সবই বুঝি। টেকনিক্যাল, ফান্ডামেন্টাল, প্রাইস অ্যাকশান সবকিছুই আমার দখলে। তার চাইতে চলো আমরা একখানা ফরেক্স শিখাইবার পাঠশালা খুলি। তাহারা আমাদের পাঠশালায় ট্রেড শিক্ষা গ্রহন করিবে। লাভ করিতে পারিলে পারিবে, আমাদের তো ফরেক্স পাঠদান করাইয়া কিছু লাভ হইবে। তোমার পিতাও সংসারে টাকা-পয়সার আগমন দেখিয়া খুশি হইবে।আমি হৈমকে বুঝাইলাম বাবার ফরেক্স ট্রেডার বউমা লাগিবে। তোমার মানি ম্যানেজমেন্টই শিখিতেই হইবে। যে রাধে সে চুলও বাধে মানি ম্যানেজমেন্টও করে তাহাকে আমি বলিলাম মানি ম্যানেজমেন্ট ছাড়া ফরেক্সে গতি নাই। মার্কেটে টিকিয়া থাকিতে হইলে মানি ম্যানেজমেন্ট আবশ্যক। শুধু ২%, ৩% বুলি আওড়ালেই হইবে না, তাহা মানিয়াও চলিতে হইবে। সত্য কথা বলিতে মানি ম্যানেজমেন্টে যে আমি নিজেও অতটা পাকা ছিলাম তাহা নহে। কিন্তু আমার বধুকে বাচাইবার লাগিয়া ততদিনে আমি গুগল নামক জাদুর প্রদীপ ঘাঁটিয়া মানি ম্যানেজমেন্টের অনেক টেকনিক শিখিয়া ফালাইয়াছি। মনে মনে আমরা সংকল্প করিলাম লাভ হউক আর লস হউক, দুই-একখানা ট্রেডের লাগিয়া এইবার আর অ্যাকাউন্ট শুন্য হইতে দেয়া যাইবেনা। ধীরে ধীরে অল্প প্রফিট করিব, বড় বড় ঝুকি আর নেয়া চলিবে না। ক্ষুদ্র তেলাপোকা টিকিয়া আছে, আর আমরা ফরেক্স মার্কেটে টিকিয়া থাকিতে পারিব না?রঙ্গিন ইন্ডিকেটরের পিছনে না ছুটিয়া আমরা সাধারনভাবে ট্রেড করিতে লাগিলাম। শুধু ভালো ভালো সুযোগ পাহিলেই ট্রেড করিতাম। লস যে কিছু হইতোনা তা বলিব না। কিন্তু আমরা লাভ করিয়া ঠিকই লস সামলাইয়া লইতাম। কয়েকমাসের মধ্যেই আমার আর হৈমর অ্যাকাউন্টে ভালো লাভ আসা শুরু করিল। আমরা লোভের বশবর্তী না হইয়া ধীরে ধীরে ট্রেড করিতে লাগিলাম।৩ মাস পর একদিন সকালে আমার পিতাকে হৈমর মাই.এফ.এক্স.বুক প্রোফাইল দেখাইয়া চমকাইয়া দিলাম। আমার পিতা যেন নিজের চক্ষুকে বিশ্বাস করিতে পারিলেন না হৈমর ভেরিফাইড মাই.এফ.এক্স.বুক প্রোফাইল দেখিয়া। তিনি বড়ই খুশি হইলেন হৈমর প্রতি। সংসারে অর্থের সমাগম হবে তাই বলে নয়, তার ফরেক্স ট্রেডার বউমার সাফল্যে তিনিও গর্বিত হইয়া তাহার ফেসবুকে হৈমর মাই.এফ.এক্স.বুক প্রোফাইলের লিঙ্ক শেয়ার করিতে লাগিলেন।না। রবীন্দ্রনাথের মত আমি হৈমকে হারাইতে দেই নাই। বরং তাহাকে সযতনে ট্রেড করার উপযোগী করিয়া গড়িয়া তুলিয়াছি। পিতার দেয়া ২ খানা টিকিট লইয়া এই মার্কেট হলিডেতে আমরা রাঙ্গামাটি ঘুরিতে যাইতেছি। সংসারধর্ম আমি শিখিয়াছি, কিন্তু তাহার সহিত আরেকটা জিনিস শেখা হইয়াছে। তাহা হইলঃ সংসার সুখী হয় রমণীর গুনে, আর ফরেক্সে লাভ হয় মানি ম্যানেজমেন্টের গুনে 37 Quote Share this post Link to post Share on other sites
Forex Student 001 1 Report post Posted September 20, 2012 what a story! 1 Quote Share this post Link to post Share on other sites
ফরহাদ বিন কামাল 278 Report post Posted September 20, 2012 অসাধারন হয়েছে, রবিদা দেখলে তো নোবেল প্রাইজটা আপনাকে গিফট করতেন। অনেক অনেক ধন্যবাদ এত সুন্দর একটা লিখা সবাইকে উপহার দেবার জন্য। 6 Quote Share this post Link to post Share on other sites
Nasim 1,066 Report post Posted September 20, 2012 সাংঘাতিক রকমের মজার গল্প । 2 Quote Share this post Link to post Share on other sites
royalmax 1 Report post Posted September 20, 2012 very nice story ... 1 Quote Share this post Link to post Share on other sites
অচিন পথিক 21 Report post Posted September 20, 2012 শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ । 1 Quote Share this post Link to post Share on other sites
জুবায়ের মিথুন 58 Report post Posted September 20, 2012 hm anek kasto korte hoiase bujite paritasi. tothapi airokam lekha amader sonnikote uposthapon koribar jonne apner proti anek dhonnobad 2 Quote Share this post Link to post Share on other sites
ASHIKNOYON 15 Report post Posted September 20, 2012 KOSOM.....!!!!JOSS....!!! 2 Quote Share this post Link to post Share on other sites
rony63404 8 Report post Posted September 20, 2012 very nice story ..kuv valo laglo...... 1 Quote Share this post Link to post Share on other sites
আশরাফ 12 Report post Posted September 20, 2012 এক কথাই সুপার, ডুপার, বাম্পার............হিট............ 1 Quote Share this post Link to post Share on other sites
DL-punk-AsS 110 Report post Posted September 20, 2012 হা হা হা হা হা হা হা হা হা হা .........ভাই aWsOmE -হইছে , হা হা হা হা হা হা হা হা হা হা হা হা , , , , ঈশ , যদি আর কয়দিন আগে লেখাটা দিতেন , তবে আমার হৈমন্তীরে হারাইতে হইত না । ধন্যবাদ ভাই সবকিছুর জন্য । 2 Quote Share this post Link to post Share on other sites
pipshunter 54 Report post Posted September 20, 2012 ek kothay oshadharon hoise forex er adionto nari nokkhotro nikhut vabe bujaia dewar jonno dhonnobad ,INSALLAH apni shofol hoben doa kori amader jonno o doa korben jeno amra money management follow kore cholte pari even myfxbook e 100 khana account history share korite pari. JAJAKALLAHU-KHAIRAN 1 Quote Share this post Link to post Share on other sites
শিক্ষনবিশ_মিরাজ 2 Report post Posted September 20, 2012 সংসার সুখী হয় রমণীর গুনে, আর ফরেক্সে লাভ হয় মানি ম্যানেজমেন্টের গুনে :rofl: :rofl: :y: :y: :y: :y: 1 Quote Share this post Link to post Share on other sites
xxAAxx 12 Report post Posted September 20, 2012 What a creativity.....MaN.....OshaM....JosS..... 1 Quote Share this post Link to post Share on other sites
MahdiHasan_976 75 Report post Posted September 21, 2012 দারুন 1 Quote Share this post Link to post Share on other sites